Car Dorkar

টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সমূহ

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল এর দুরত্ত মাত্র ১০০ কিলোমিটার এর মত আর তাই ঢাকার কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ১ দিনের ছুটি নিয়ে ঘুরে আসার মত টাঙ্গাইলে আছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে মহেড়া জমিদার বাড়ি, অতিয়া জামে মসজিদ, ২০১ গমবুজ মসজিদ, নগরপুর জমিদার বাড়ি , সোহাগ পল্লী , করটিয়া জমিদার বাড়ি ইত্যাদি উলেখ্য যোগ্য

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাতায়াত ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে খুব সহজেই বাস, ট্রেন, ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা ভাড়া গাড়ি নিয়ে টাঙ্গাইল যাওয়া যায়। ঢাকার প্রায় সব জায়গা থেকে টাঙ্গাইলে বাস পাওয়া যায়, দিনে ৪ থেকে ৫ ট্রেন ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে বিভিন্ন ষ্টেশনে যাতায়াত করে। 

ঢাকা থেকে এক দিনে ঘুরে আসতে পারবেন টাঙ্গাইলের এমন ৫ টি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান

একদিনের ছুটিতে ভালভাবে ঘুরে আসা যাবে এমন ৫টি দর্শনীয় স্থান নিচে উল্লেখ করা হলো সাথে কি ভাবে যাবে কি দেখবেন কোথায় থাকবেন সকল তথ্য দেওয়া হলো।

মহেড়া জমিদার বাড়ি

মহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১৮ মাইল পূর্বে ও ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে আট একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এখানে প্রধান ফটক দুইটি। এছাড়া বিশাল তিনটি প্রধান জমিদার ভবন রয়েছে। এছাড়া ও কাছারি ঘর, নায়েব সাহেবের ঘর, দিঘি আর তিনটি লজ রয়েছে। ভবনের পিছনে পসরা পুকুর ও রানী পুকুর নামে দুটি পুকুর রয়েছে। মহেরা জমিদার বাড়িতে প্রবেশ মূল্য ৮০ টাকা। ছুটির দিনে এটি অনেক গুনে বেড়ে যায়। এবং বোট রাইটে চড়তে চাইলে দরদাম করে নিতে হবে। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যেকোনো বাসে উঠে নাটিয়াপাড়া বাজার নামতে পারেন। নাটিয়াপাড়া বাজার থেকে মহেড়া জমিদার বাড়ীর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। মহেরা জমিদার বাড়ির গেটের সাথেই Hello নামের দোতলা বিশিষ্ট একটি ক্যান্টিন আছে। এছাড়াও পসরা পুকুর এবং ঝর্নার সাথে দুইটি ছোট ক্যান্টিন রয়েছে।

আতিয়া জামে মসজিদ 

আতিয়া জামে মসজিদ বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি টাঙ্গাইল শহর থেকে ৬কিলোমিটার দক্ষিণে আতিয়া গ্রামে অবস্থিত। মসজিদটি লাল ইট দিয়ে তৈরি‌। মসজিদটি মূলত বর্গাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট। এছাড়া পূর্ব দিকে ছোট তিন গম্বুজ বিশিষ্ট বারান্দা রয়েছে। বারান্দা থেকে মসজিদে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের কিবলা দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলঙ্কৃত মেহরাব। আতিয়া মসজিদের পূর্ব ও উত্তর দেয়ালে রয়েছে চমৎকার সব পোড়ামাটির নকশা। লাল ইট দ্বারা নির্মিত এই মসজিদটি আকারে বেশ ছোট, মাত্র ১৮.২৯ মিটার। এর চারকোণে ৪টি অষ্টকোণাকৃতীর মিনার রয়েছে, যার উপরের অংশটি ছোট গম্বুজের আকৃতি ধারণ করেছে। সুলতানি ও মুঘল এই দুই আমলেরই স্থাপত্যরীতির সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে এই মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে। নকশা, অসংখ্য ফুলের অলংকরণের কারণে আতিয়া মসজিদ বেশ দৃষ্টিনন্দন। 

নগরপুর জমিদার বাড়ি

নাগরপুর জমিদার বাড়ি যা স্থানীয়দের কাছে নাগরপুর চৌধুরী বাড়ি নামে পরিচিত। টালাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় প্রায় ৫৪ একর জমির উপর জমিদার সুবিদ্ধা-খাঁ এর সূত্র ধরে যদুনাথ চৌধুরী নাগরপুরে জমিদারী শুরু করেন। ১৯৪৭ এর দেশ বিভক্তির পর একসময় তদানিন্তন সরকার চৌধুরী বাড়ীর সকল সম্পদ অধিগ্রহণ করে। অট্টালিকাটির পুরো কাজটি শ্বেত পাথরে গড়া। বর্তমানে চৌধুরী বাড়ীর এই মুল ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে বিনিময়, নিরালা, ধলেশ্বরী, ঝটিকা ইত্যাদি বাস যায় টাঙ্গাইল। ভাড়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। এসব বাসে চড়ে টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ডে নেমে অপেক্ষ্মান সিএনজি বেবীটেক্সী যোগে সরাসরি নাগরপুর চৌধুরী বাড়ী। টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থানগুলো ঢাকা থেকে একদিনে যেয়েই দেখে আবার ঢাকায় ফিরতে পারেন। তবে যদি কেউ সময় নিয়ে দেখতে চান তাহলে একরাত টাঙ্গাইল সদরে থাকতে পারেন। টাঙ্গাইলে থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। 

করটিয়া জমিদার বাড়ি

বাংলাদেশে যে কয়টি জমিদার বাড়ি সমৃদ্ধ এবং ইতিহাসের সাথে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে করটিয়া জমিদার বাড়ি অন্যতম। টাঙ্গাইল জেলায় বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ি রয়েছে। কিন্তু সবগুলোকে ছাপিয়ে ইতিহাস আর ঐতিহ্যে করটিয়া জমিদার বাড়ি আলাদা স্থান করে নিয়েছে। টাঙ্গাইল শহর হতে ১০ কি.মি. দূরে পুটিয়ার তীর ঘেঁষে আতিয়ারচাঁদ খ্যাত জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর জমিদার বাড়ি। এখানে বিশিষ্ট প্রাচীরঘেরা যেখানে রয়েছে লোহার ঘর, রোকেয়া মহল, রাণীর পুকুরঘাট, ছোট তরফ দাউদ মহল এবং বাড়িসংলগ্ন মোগল স্থাপত্যের আদলে গড়া মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য। মোগল স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত জমিদার বাড়িটি প্রথম দর্শনেই আপনার মন কেড়ে নেবে। সীমানা প্রাচীরের ভেতরে অবস্থিত মোগল স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন রোকেয়া মহল অথচ এটি আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একদিনের ট্যুরে গেলে এই জমিদার বাড়ী ছাড়াও চলে যেতে পারেন ঐতিহ্যবাহী আতিয়া মসজিদ দেখতে, একই পথে রয়েছে দেলদুয়ার জমিদার বাড়ী। দেখে আসতে পারেন মওলানা ভাসানীর সমাধি এবং জাদুঘর, সাথে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি।

সোহাগ পল্লী

কর্মব্যস্ত জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে সোহাগ পল্লী রিসোর্ট বাংলাদেশের সেরা একটি স্থান। গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কালামপুর গ্রামে প্রায় ১১ একর জায়গার জায়গা জুড়ে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে সবুজের আলিঙ্গনে গড়ে তোলা হয়েছে সোহাগ পল্লী। সোহাগ পল্লীতে নির্মিত ঝুলন্ত সাঁকোর পিলার এবং বেলকনিতে খোঁদাই করা কারুকাজ এখানে আগত অতিথিদের আকর্ষণ করে। এখানে রয়েছে কৃত্রিমভাবে নির্মিত লেক, যেখানে সারা বছরই পানি থাকে আর পানিতে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সোহাগ পল্লীতে আবাসনের জন্য রয়েছে বেশকিছু উন্নতমানের কটেজ। আর কটেজের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া লেক যেন ইতালির ভেনিসের কোন সাজানো গ্রামের প্রতিচ্ছবি। এছাড়া এখানে রয়েছে মেজবান নামের একটি দ্বিতল রেস্টুরেন্ট, সুইমিং পুল ও কনফারেন্সের জন্য হল রুম। আর বাচ্চাদের চিত্তবিনোদনের বিভিন্ন উপকরনের পাশাপাশি এখানে স্থাপন করা হয়েছে আকর্ষণীয় কিছু প্রতিকৃতি। সোহাগ পল্লীতে সার্বক্ষণিক সেবা দেয়ার জন্য ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।